unsocial
Rifat Hasan UnSOCIAL
We must discuss injustice not out of sympathy for the afflicted, but because injustice is a prison for both the oppressed and the oppressor.
§

আনসোশালে অল্প লিখেছিলাম। এখানে আবার উসকে দিই। গণভোট আর জুলাই সনদ নিয়া।

গণভোটের চার দফা, আর জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সাথে গণভোট, উভয়ই কিম্ভূত আইডিয়া বলতে হবে। এই আইডিয়ার রূপকাররা জাতীয় নির্বাচন আর গণভোটরে এক ভাইবা বসেছেন, বা আমাদেরকে এক ভাববার প্রস্তাব করছেন। আমার মতে, জাতীয় নির্বাচন এক্সক্লুসিভলি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের ব্যাপার হলেও, গণভোট সুপেরিয়র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রশ্ন। একই দিনে নির্বাচন এবং গণভোট ফলত একটা ফাঁদে রূপান্তরিত হতে পারে, যা অবশেষে এক রশিতে দুই ফাঁসির প্রতীকী ধারণারে উসকে দেবে। এইখানে একই সকথে উভয়ের মৃত্যু হতে পারে।

আমার মত হল, ইউনুস এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারলে ভাল। অলরেডি নির্বাচন কমিশন বলেছে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট চ্যালেঞ্জিং। এই একই দিনে দুই নির্বাচনের ধারণা কোন মেধাবীর ( কোটা না মেধা? হা হা।) মাথা থেকে আসছে জানি না, কিন্তু যে মহামুনিই ভাবুন, নির্বাচন কমিশনের এই কমেন্টরেও অন্তত উনারা আমলে নিতে পারেন, আমাদের কথা না নিন।

দুইটা বিষয়ে স্পষ্ট থাকা দরকার।

এক. গণভোট রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দেশ কারা পরিচালনা করবে, সেই শাসন ক্ষমতার ম্যান্ডেট ধরনের কোন কল্পনা নয় এইটা, সালাহউদ্দিন আহমদরা মিষ্টি মধুর স্বরে যেটি বলে থাকেন প্রায়ই। বরং গণভোটের গন্তব্য হল, যারাই দেশ চালানোর জন্য নির্বাচিত হবেন, তারা কীভাবে চালাতে বাধ্য থাকিবেন, লঙ্ঘন না করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন, তারে লইয়া ভাবা। এমন কি সংবিধান কেমন হবে, তারে লইয়াও। ফলে, নির্বাচন হল মাইনা চলার ব্যাপার, আর গণভোট ডিকটেইট করার ব্যাপার। এইটা স্বয়ং নির্বাচিতদের প্রতি যে মেন্ডেট কল্পনা করা হয়, সেই মেন্ডেটেরও লেজিটিমেসির প্রশ্ন ঠিকঠাক করবে।

এইটুক যদি বুঝেন, তাহলে এইটাও বুঝবেন, এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তরে নির্বাচন কমিশনের ফাঁদে রাইখা সামনে আগানো মানে, গণভোট, সাথে জুলাই সনদেরও একটা অনিশ্চিত গন্তব্য ঠিক কইরা দেওয়ার ফন্দি, যা, আপাত একটা বিপদই। এর আঁচ কিছুটা বুঝবেন, যখন দেখবেন, বুদ্ধিজীবীরা এবং পত্রিকাগুলো এখন প্রচুর আলাপ তৈরী করছে, না ভোট জয়ী হলে কী হবে ইত্যাদি। এই আলাপগুলোর সারাংশ হল, না ভোট হইলে বিএনপি বা অন্য কোন দল জুলাই সনদ থিকা স্বাধীন হইয়া যাবে।

হা হা। এইটা একটা মজার প্রেডিকশন বটে।

এই নিয়া প্রথম আলোর এক্সপ্লেইনার পড়লাম। ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা পাঠালেন এক বন্ধু। জিয়া হাসানের লেখা পাঠালেন একজন। সবার এক্সপ্লেইনার এক। 'না’ ভোট জয়ী হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী দল জুলাই সনদ মেনে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে না। পরবর্তী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ইচ্ছার ওপরই সংস্কার নির্ভর করবে। মানে, সবাই একটা কু নিয়া বইসা আছে। এই কু এর পেছনে কে থাকবে, তাও ঠিক হয়ে গেছে মোটামুটি। বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদিন ফারুক বিহানবেলাতেই সব ঠিকঠাক কইরা ঘোষণা দিছেন। উনি সমর্থকদের না ভোটের আহবান জানাইছেন।

আপাতত, এহ ইতিবৃত্ত।

এই ইতিবৃত্তের উপসংহার হল, নির্বাচনে জিততে চাওয়া দলগুলো ও ওদের বুদ্ধিজীবীরা এই কু-এর উপরেই সওয়ার হইতে চান। এই কু-ভাবনাটা তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ইউনুস সাহেব, গণভোট এবং নির্বাচন একই দিনে ঘোষনা কইরা। এই সওয়ারের মতলবগুলোতে যেমন ইচ্ছা বাপের দেশের শাসনের বিরুদ্ধে যে জনকনসেনসাস এর উপরে ভিত্তি কইরা স্বৈরাচারের পতন হল, তার উপরে দাঁড়াবার কোন আগ্রহ নেই। শুধু ক্ষমতা দখলের বদ মতলব আছে। কিন্তু তাদের এই ভাবনা যে ভুল, তারে নিয়া আলাপ করবো আর একদিন, যদি সুযোগ হয়।

দ্বিতীয়ত, গণভোটের চার দফা, এইটা কেমন আইডিয়া? এইটা, আমার মতে, মূলতই গণভোটকে ব্যর্থ করার আইডিয়া। এজনগণ কর্তৃক একটা সফল গণঅভ্যুত্থান ও স্বৈরাচারের পতনের পরে জনগনের হাতে বাচ্চাদের বাল্যশিক্ষা ধরিয়ে দেওয়ার মত ব্যাপার হল এইটা।

মূলত, গণভোট হতে হবে এক দফায়। আর তার নাম জুলাই সনদ। জুলাই সনদে কী আছে, তা তো ঐতিহাসিকভাবে রিজলভড হয়ে আছেই। তারে আবার গণভোটের ব্যালটে ভেঙে বুঝিয়ে দেওয়ার মানে হল, মানুষ যেটি বুঝে, গণভোট মানে যেমন ইচ্ছা বাপ বেটির শাসন আর চলবে না, এইটার যে পতন হল, তার পক্ষে ভোট, এইটারে হুদাই জটিল হিশেবে উপস্থাপন।

এর ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনগণকে জিগেশ করছেন, আপনারা কি গণভোট, সনদ এসব বোঝেন? হা হা। জনগণ যে এই ভাষায় এই সব বোঝেন না, তা অবশ্য সত্যিই। কিন্তু জনগন যে ভাষায় বুঝেন, কথা বলেন, মির্জা ফখরুল কি সেই ভাষা হাজির করতে চান, নাকি জনইচ্ছেরেই ব্যর্থ করতে বলেন? ফখরুল প্রমুখ রাজনৈতিক নেতারা এই সত্য এমনভাবে বলছেন, আপনার মনে হবে, এই না বুঝার ঘটনার কারণেই অন্তত গণভোট আর জুলাই সনদ বন্ধ করতে হবে।

ফখরুল তাদেরকে বুঝাচ্ছেন, 'ঘাড়ের ওপর' তাদের না বুঝা 'গণভোট ও সনদ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে'। মির্জা ফখরুল প্রবীণ ও সৌম্য বিএনপি নেতা, নিশ্চয় জ্ঞানীও, উনাদেরে এই প্রশ্ন করা দরকার যে, উনারা কি ফ্যাসিবাদের দিনগুলোতে 'গণঅভ্যুত্থান' বুঝতেন? বুঝাবুঝির প্রশ্ন তোলা তো কিছুটা অভব্যতাই। কিন্তু আমার এই প্রশ্ন ব্যক্তিগত বুঝাবুঝির ব্যাপার না, রাজনৈতিক। হাসিনার দিনগুলোতে উনারা যে গণঅভ্যুত্থান বুঝতেন, আমাদের কাছে তার কোন নজির হাজির নেই এখনো। এই জায়গা থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সরলোক্তিটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সরলোক্তি বলে, এই অবুঝ ও অনিচ্ছুক নেতাদের উপরে গণঅভ্যুত্থানও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এইটা জুলুম ছিল।

উনারাও কি মনে করেন, জুলুম ছিল?

#রিফাতহাসান

/ একই সাথে #ফেসবুকেও প্রকাশিত।

November 24, 2025

60 readers till now, 60 new visits today.
click to comment


Be the first to comment!

Tags

  • No recent tags found.