ফেসবুক ফিরে পেলাম। আমার তো অত তাড়াতাড়ি কোথাও যাবার নেই, থেমে জিরোবার অবসর আছে। এরকম কিছু জরুরি অবসর পেলাম, গত দেড় মাসেরও অধিক সময়। এজন্য যারা আমার ফেসবুক বন্ধে অবদান রেখেছেন, তাদেরে ধন্যবাদ দেওয়া যায়। এখন থেকে, আমি কিছুটা 'আনসোশাল' থাকব।
শেখ হাসিনার আমলে, এক কবি বন্ধু, ধর্মে হিন্দু, জানাইছিলেন, তাদের বন্ধুদের একটা বড় গ্রুপ আমার সোশাল হ্যান্ডেল বন্ধে তার এবং তার অন্যান্য বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি রাজি হন নাই, কারণ তিনি আমার লেখালেখিরে জরুরি ভাবেন ও ভালবাসেন। তিনি উনাদেরে হেল্প না করলেও, তখন ফেসবুক আমার একাউন্ট সাসপেন্ড করেছিল। একটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য সেই সময় তার ব্যক্তিগত কোন একজন কনটাক্টের মাধ্যমে আমার ফেসবুক একসেস ফিরে পেতে হেল্প করেন।
সব সত্ত্বেও, আমি মনে করতাম, আমার লেখালেখির প্রতি কারো বৈরী হওয়া অসম্ভব। কারণ আমি বেশ নিরীহ নীতিশাস্ত্র ও দর্শনের আলাপ করি মাত্র, যেটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম লোকেই বুঝতে আগ্রহী, বা প্রস্তুত না। এইখানে কেউ শত্রু হন না, মাঝে মধ্যে আমার সাবজেক্ট হয়ে বিভ্রান্ত হন মাত্র। সাবজেক্ট হিশেবে, অনেকেই মাঝে মধ্যে বিমূঢ় হতে পারেন সত্য, কিন্তু উনারা আমারে বন্ধ কইরা দিতে চাইবেন, এইটা মনে হয় নাই কখনো। ফলে, মাস দেড়েক আগে একজন যখন হোয়াটসঅ্যাপে জানালেন, আমার ফেসবুক বন্ধে অবদান রাখতে একটা সংঘবদ্ধ প্রচারণা হয়েছে, এবং এ কারণেই আমার ফেসবুক বন্ধ হল, এর স্বপক্ষে কিছু পপুলার গ্রুপের স্ক্রিণশট পাঠালেন, তখন অবাক হলাম।
তখন আনসোশাল নামে একটা পারসোনাল প্লাটফর্ম এর আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করলাম। এই কাজটা আগাচ্ছে ধীরে ধীরে, অন টেস্ট। ওখানে আমাকে নিয়মিত পাবেন। কিন্তু অইখানে ফেসবুকের মত কইরাই কয়েকটা বাক্য লিখতে গিয়ে হোঁচট খেলাম। দেখলাম, রোবটের মত আলাপ হচ্ছে। জমছে না। কারণ, আমি একা একা কথা কচ্ছি।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের একটা কোলাহলের সাইকোলজি তৈরী করে দিয়েছে। কোলাহলের ভেতরে, আমরা কিছু মানুষ নিজের একটা নিরবতা নির্মাণ করেছি মাত্র, যাতে মুখোমুখি বইসা কথা বলতে পারি। তবে ভেবে দেখলাম, আমাদের এই অভ্যস্ততা ও অনভ্যস্ততা কাটিয়ে ওঠা একটু কঠিন হলেও, সম্ভব।
যেমন, খেয়াল করলাম, গত এক মাস সোশাল মিডিয়ায় হাজিরা না থাকায়, আমি প্রায় তেমন কিছু নিয়াই ভাবিত না। শুনলাম, জুলাই সনদ হচ্ছে। শেখ হাসিনার রায় হচ্ছে। গণভোট পণ্ড হচ্ছে। কিন্তু তার প্রায় সব কিছুই আমারে কম স্পর্শ করল। যেহেতু পত্রিকা ও টিভি দেখি না, সোশাল মিডিয়ায়ও নেই, আমি প্রায় খবরহীন একজন মানুষ হয়ে থাকতে পারাটারে এনজয় করলাম।
আজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ফিলসফি ফেস্টে গেলাম। এইটা কাকতালীয় ছিল। ফিলসফি দেইখা আমি নিজেই আগ্রহী হইছিলাম, পরে মোজাম্মেল ভাই ও উনার ছাত্ররা অসম্ভব আগ্রহ দেখালেন। ওইখান থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মিরাজ, পরে মুকিম আর সৌরভদের সাথে দেখা, বহুদিন পর। উপরের ছবিতে ওরা তিনজনের সাথেই হাঁটছি। 'আমরা তিনজন' নামে ওদের একটা প্লাটফর্ম আছে, সম্ভবত চব্বিশের ফেব্রুয়ারিতে আমারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়েছিল ওরা। নাকি তেইশ? তো, ওরাই জানাল, আমার ফেসবুক নাকি গতকালকে থেকে পাওয়া যাচ্ছে। আমি একটু অবাক হলাম। এবং আমার অবসর থেকে যে জিরোনোর সময় হল আবার, কিছুটা বুঝলাম। যদিও, আমি সম্ববত আনসোশালই থাকারে পছন্দ করব আরো বহুদিন। এইসব ভাবতে ভাবতেই, একটু আগে ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে কোন একটা নিউজ খেয়াল করলাম, কারে যেন কোন বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে। এইসব নিউজ হাসিনার সময়ে প্রচুর পেতাম।
ফিলসফি ফেস্টের স্টেইজে কথা বলতে আমন্ত্রণ জানালে আমি উঠে কিছুটা ঠাট্টা করে বলতেছিলাম, বহু বছর ধইরা আমরা লঘু ছিলাম, কারণ আমরা অস্তিত্বের রিয়েলিটিরে নিয়া প্রশ্ন উত্থাপন করি নাই। অস্তিত্বের রিয়েলিটিরে নিয়া প্রশ্ন করা তো ফিলসফির জরুরি কাজ। কিন্তু এই জরুরি কাজটা আমরা বহু বছর ধইরা থামিয়ে রেখেছিলাম, রাষ্ট্রে। তো, এখন, এই খবরগুলো পড়তে পড়তে আবার ভাবছিলাম, এখনো কি প্রশ্ন করতে সক্ষম আমরা? কেন জুলাই জাগরণের পরেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রে শাদা পোশাকের বাঘ ভাল্লুক নাগরিকদেরকে তুলে নিয়ে যাবে?
সর্বশেষ, কৃতজ্ঞতা স্বীকার। আমি সামান্য মানুষ৷ তাও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-এর দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা বন্ধু ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই সামান্যের ফেসবুক প্রফাইল উদ্ধারে আশ্চর্যজনক দ্রুততার সাথে হেল্প করলেন। আমি মুগ্ধ। এই যজ্ঞের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আরো যাদের রেসপন্স ও আন্তরিকতা পেয়েছি, তারা হলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়িম, পলিটিশিয়ান মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ, আর সাংবাদিক কদরুদ্দিন শিশির, সাইবার এক্সপার্ট মঞ্জুর শরিফ। উনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। ইনবক্সে যে মেসেজগুলো জমছে, সবগুলোর উত্তর হিশেবে এই পোস্ট। অন্য কোথাও আলাপ হবে আবার।
#রিফাতহাসান
/ একই সাথে #ফেসবুকেও প্রকাশিত।
Be the first to comment!